শেষ উইকেট জুটিতে ধৈর্যের ‘পরীক্ষা’ নিচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরীক্ষা শেষের ঘণ্টা বাজালেন তাইজুল। নিশ্চিত এলবিডব্লিউ, আবেদনে আম্পায়ার সাড়াও দিলেন। মুহূর্তের মধ্যে স্টাম্প তুলে মিরাজদের জয়োল্লাস শুরু। শেমরন লুইসের বোধ হয় তা পছন্দ হয়নি। চাইলেন রিভিউ। টিভি আম্পায়ার দেখিয়ে দিলেন, ওটা আউট। ব্যস, হয়ে গেল রেকর্ড!
ছবিটা কল্পিত নয়, মিরপুর টেস্টের শেষ দৃশ্য। যেখানে স্পিন ফাঁসের শেষ শিকার লুইস। এই সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চারটি ইনিংসে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই একটাই ছবি। শুধু ব্যাটসম্যান আর বোলার বদলেছে কিন্তু আউট হওয়ায় বলের ধরন সেই একই—স্পিন। ঘূর্ণি। আর তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ২০ উইকেট ভাগ করেছেন বাংলাদেশের ‘স্পিন চতুষ্টয়’—মিরাজ, সাকিব, তাইজুল ও নাঈম। এই ভাগাভাগিতেই হয়েছে রেকর্ডটি। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে এই প্রথম প্রতিপক্ষ দলের সবগুলো উইকেট নিলেন স্পিনাররা।
সিরিজের প্রথম টেস্টে এক পেসার ছিল দলে। সে যেন নামকাওয়াস্তে, কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ইনিংস মিলিয়ে মোস্তাফিজ বল করেছেন মাত্র ৪ ওভার। বাকি ৯৫.২ ওভার (ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ইনিংস মিলিয়ে) ছিল চার স্পিনারের। সে টেস্টে ক্যারিবীয়দের ২০ উইকেট ভাগাভাগি হয়েছে এভাবে—তাইজুল ৭টি, নাঈম ৫টি, মিরাজ ৩টি আর সাকিব ৫টি। মিরপুরে পরের টেস্টে পেসার খেলানোর বিলাসিতার (!) মধ্যে আর যায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। ‘যস্মিন দেশে যদাচার’—মানে, শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বাইশ গজকে স্পিনবান্ধব বানিয়ে নামানো হলো শুধু স্পিনার। ফল মিলেছে হাতেনাতে। নিজেরা রান উৎসবে মাতলেও প্রতিপক্ষের ইনিংস দুইবার গুটিয়ে গেছে একদিনেই (সেশনের হিসেবে)! ক্যারিবীয়দের সব উইকেট যে স্পিনারদের তা না বললেও চলে।
ব্যাপারটা সত্যিই মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। না, এই সিরিজে স্পিনারদের সব উইকেট নেওয়ার জন্য নয়। দুই টেস্টের সিরিজে প্রতিপক্ষের সব উইকেট নেওয়ার কীর্তিটা তো এবারই প্রথম হলো। এই ‘প্রতিযোগিতা’র শীর্ষ ছয়ে পাঁচবারই জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম—সে জন্য! এর আগে দুই টেস্টের সিরিজে প্রতিপক্ষের ৩৮টি উইকেট নেওয়াই ছিল সর্বোচ্চ নজির। সেটিও বেশি দিন আগের কথা নয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে—যা মেহেদী হাসান মিরাজের সিরিজ হিসেবে অনেকেই গেঁথে রেখেছেন মনের ফ্রেমে। ইংলিশদের মোট ৪০ উইকেটের প্রায় অর্ধেক (১৯) মিরাজ একাই নিয়েছিলেন। এই সিরিজেও অর্ধেকের কাছাকাছি—১৫টি।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই সিরিজকে গত জুলাইয়ে হুমকিতে ফেলে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ। লঙ্কানদের ঘরের মাঠে এই সিরিজে প্রোটিয়াদের ৩৭ উইকেট নিয়েছেন স্বাগতিক স্পিনাররা। গত মাসে সেই সিরিজকে চোখ রাঙানি দেখিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে ৩৪ উইকেট ভাগ করে নিয়েছিলেন তাইজুল-মিরাজরা। প্রতিপক্ষের চার ইনিংস মিলিয়ে ৩৩ উইকেট নেওয়ার নজির বাংলাদেশের স্পিনাররা গড়েছিলেন ৯ বছর আগে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই সিরিজে—প্রতিপক্ষের মাঠে সেটি ছিল প্রথম সিরিজ জয়ের আনন্দ।
ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ দলের স্পিনারদের হাতেও নাকানি-চুবানি খেয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া দলের সফর মনে আছে? ১-১ ব্যবধানে ড্র হওয়া সেই সিরিজে বাংলাদেশের ৪০ উইকেটের মধ্যে ৩২টি তুলে নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনাররা। নাথান লায়ন একাই নিয়েছিলেন ২২ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই সিরিজে বাংলাদেশের কোনো স্পিনার দুই ম্যাচ মিলিয়ে ১৫ উইকেটের ওপাশে যেতে পারেননি। মিরাজ তা করে সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক।
দুই টেস্টের সিরিজে স্পিনারদের সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড:
ম্যাচ |
মোট উইকেট |
ইনিংসে সেরা বোলিং |
ম্যাচে সেরা বোলিং |
গড় |
সিরিজ |
২ |
৪০ |
৭/৫৮ |
১২/১১৭ |
১৬.৪০ |
বাংলাদেশ–ওয়েষ্ট ইন্ডিজ, ২০১৮ |
২ |
৩৮ |
৬/৭৭ |
১২/১৫৯ |
১৯.৯২ |
বাংলাদেশ–ইংল্যান্ড, ২০১৬ |
২ |
৩৭ |
৬/৩২ |
১০/৭৮ |
১৫.১০ |
শ্রীলঙ্কা–দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০১৮ |
২ |
৩৪ |
৬/১০৮ |
১১/১৭০ |
২০.১১ |
বাংলাদেশ–জিম্বাবুয়ে, ২০১৮ |
২ |
৩৩ |
৫/৫১ |
৮/১১০ |
১৭.৫১ |
বাংলাদেশ–ওয়েষ্ট ইন্ডিজ, ২০০৯ |